চীনে হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (HMPV) এর অস্বাভাবিক ও ব্যাপক বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটির একাধিক প্রদেশে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্তের হার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাসপাতালগুলোতে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।
হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (HMPV) মূলত শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে। সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিস পর্যন্ত গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য এই ভাইরাস মারাত্মক হয়ে উঠছে।
চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলে প্রায় ৪৫% শ্বাসতন্ত্র-সংক্রান্ত রোগীর মধ্যেই HMPV শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়টায় জনসাধারণের মধ্যে কম সংক্রমণের ফলে মানুষের প্রাকৃতিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, যার ফলে এই ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
বেইজিং ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. লি ওয়েই বলেন, "আমরা প্রতি মৌসুমেই HMPV দেখি, কিন্তু এবারের সংক্রমণ সংখ্যা অতীতের যে কোনো বছরের তুলনায় অনেক বেশি। হাসপাতালগুলোয় বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভর্তি হারের গড় ৩০% বেড়েছে।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ইতোমধ্যেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “HMPV নতুন কোনো ভাইরাস নয়, তবে এর বর্তমান বিস্তারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে WHO। সংক্রমণের প্রকৃতি, বিস্তার এবং ভাইরাসের নতুন কোনো রূপ সৃষ্টি হয়েছে কিনা, তা নিরীক্ষা করা হচ্ছে।”
এই মুহূর্তে ভাইরাসটির কোনো নির্দিষ্ট টিকা বা চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। ফলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যেমন মাস্ক পরিধান, ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
চীনের বাইরে, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও থাইল্যান্ডেও বিচ্ছিন্নভাবে HMPV সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বাড়তি নজরদারি ও স্ক্রিনিং চালু করার আহ্বান জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধে আগাম প্রস্তুতি নেওয়াই এখন জরুরি।